সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

বাংলাদেশ হ্যাকিং গ্রুপ।

বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ হ্যাকিং এর দিক থেকে অন্যান্যদেশের তুলনায় একটি সম্মানজনক অবস্থানে রয়েছে। দেশের কিছু নতুন ও মেধাবী প্রজন্ম হাল ধরেছে বাংলাদেশের হ্যাকিং ওয়ার্ল্ডের। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকার যখন নিশ্চুপ তখন এদেশের হ্যাকাররাই প্রতিবাদ জানায় প্রতিপক্ষ দেশ বা প্রতিপক্ষ গোষ্ঠীর প্রতি। তারা তাদের এই প্রযুক্তির অস্ত্র ব্যাবহার করে হ্যাক করে প্রতিপক্ষের ওয়েবসাইট।


বাংলাদেশের হ্যাকিং জগত মুলত গ্রুপ ভিত্তিক। নামকরা অনেক গ্রুপই আছে বাংলাদেশে। দেশের সাইবার স্পেস সুরক্ষায় তারা নিবেদিত প্রাণ। এবার জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের কিছু প্রথম কাতারের কিছু হ্যাকার গ্রুপ সম্পর্কে-

  • বাংলাদেশ সাইবার আর্মি
  • এক্সপায়ার সাইবার আর্মি
  • বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারস
  • হেক্সরোসিস্ট
  • বাংলাদেশ গ্রে হ্যাট হ্যাকারস
  • সাইবার ৭১


বাংলাদেশ সাইবার আর্মিঃ বাংলাদেশের প্রথম সাইবার সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান এবং হ্যাকার গ্রুপ বাংলাদেশ সাইবার আর্মি যাত্রা শুরু করে ২০১০ এর ডিসেম্বরে। প্রাথমিক অবস্থায় কয়েকজন হ্যাকার মিলে ডিসেম্বরে আগে শুরু করে ওয়েবসাইট হ্যাকিং প্র্যাকটিস। আর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গড়ে তোলে বাংলাদেশ সাইবারআর্মি নামের হ্যাকার গ্রুপ। তাদের গ্রুপের ট্যাগ লাইন বা নীতিকথা হল-

United as a Single ONE, 
Divided by ZERO. 
Our work is for our country, 
Our fight is for humanity. 
We want Justice. 
We are, 
Bangladesh Cyber Army.

গ্রুপটি শুরু থেকেই তাদের নিত্যনতুন ডিফেসমেন্ট দিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে দেশের মানুষদের। তারা ত্যাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে ফেইসবুক গ্রুপের মাধ্যমে। বাংলাদেশ-ভারত সাইবার যুদ্ধের সময় বেশিরভাগ সাইট হ্যাক করে এই গ্রুপের ক্রু মেম্বাররা। ভারতের অনেক সরকারী ও বেসরকারী ওয়েবসাইট হ্যাক করে ভারত সরকারের দৃষ্টি কাড়ে। 

অন্যান্য অনেক উদ্দেশ্যের পাশাপাশি মুলত বাংলাদেশ এবং ভারত সাইবার যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যা বন্ধ করা। সেসময়য় ভারতের প্রায় সহস্রাধিক ওয়েবসাইট হ্যাক করে সাইটের প্রধান পেইজে ঝুলিয়ে দেয় বিএসএফ এর গুলিতে নিহত কিশোরী ফেলানির ছবি। বাংলাদেশ সাইবার আর্মির আরও কয়েকটি বড় অর্জন হল, প্রতিষ্ঠাতা এডমিন সাদমান তানজিমের গুগল ল্যাব ডাটাবেস ইঞ্জেক্টিং ত্রুটি খুঁজে বের করা এবং বাংলাদেশ সাইবার আর্মির আরেকজন এডমিন নীল নিরব দ্বারা নাসার ওয়েবসাইট হ্যাক হওয়া। এছাড়াও বিশ্বের নামকরা কিছু হ্যাকিং কমিউনিটির ওয়েবসাইট হ্যাক করার কৃতিত্বও আছে তাদের ঝুলিতে



এক্সপায়ার সাইবার আর্মিঃ বাংলাদেশের সাইবার স্পেসে আরেকটি পরিচিত মুখ হল এক্সপায়ার সাইবার আর্মি। বাংলাদেশ-ভারত সাইবার যুদ্ধের আগমুহূর্তে ২০১১এর ডিসেম্বরে জন্মনেয়া এই গ্রুপটি বাংলাদেশ-ভারত সাইবার যুদ্ধে অন্যান্যদের মত বিপুল সংখ্যক ওয়েবসাইট হ্যাক করে। তাছাড়া তারা সাইবার যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া বেশকিছু বাংলাদেশী ওয়েবসাইট পূর্বের অবস্থায় ফিরেয়ে নিতে সহযোগিতা করে। গ্রুপটিতে রয়েছে বেশকিছু তরুন এবং মেধাবী মুখ কিন্তু বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের ওয়েবসাইট হ্যাক করার কারণে কিছুটা বিতর্কের মাঝে পড়ে যায় গ্রুপটি। এক্সপায়ার তাদের ট্যাগলাইন হিসেবে ব্যাবহার করে

 “We Never Give Up”

এক্সপায়ারের রয়েছে সুগঠিত কোডার ইউনিট যারা নিত্য নতুন টুল তৈরি ও মোডিফাই করে ব্যাবহার করে নিজেদের প্রয়োজনে। তাদের তৈরি করা ম্যাস ডিফেসমেন্ট টুল AK-47 বেস জনপ্রিয়। এবং তাদের রয়েছে ওয়েবসাইট মিরর তৈরি করার জন্য HACK-DB নামের একটি ওয়েবসাইট যেখানে বিশ্বের অনেক হ্যাকাররা কোন ওয়েবসাইট হ্যাক করার প্রমাণস্বরূপ মিরর তৈরি করে রাখেন।

এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ সাজিদ নামের একজন বাংলাদেশী হ্যাকার। তিনি পূর্বে বাংলাদেশ সাইবার আর্মিতে কাজ করেন এবং পরবর্তীতে নিজেই এক্সপায়ার নামের একটি হ্যাকিং গ্রুপ জন্ম দেন। তাছাড়াও এক্সপায়ারে রয়েছে বেশ কয়েকজন একটিভ ক্রু মেম্বার।



বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারসঃ বাংলাদেশের আরেকটি জনপ্রিয় গ্রুপ হল বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারস। বিভিন্য মিডিয়াতে পাওয়া তথ্যমতে বাংলাদেশ-ভারত সাইবার যুদ্ধের সুচনা হয়েছিল এই বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারস গ্রুপের হাত ধরে। বর্তমানে তাদের অবস্থা খুব একটা চোখে পড়ার মত না। তাদের নিজেদের মধ্যে অন্তকোন্দলের জন্যই তাদের অবস্থা আগের তুলনায় খারাপ হয়ে গেছে। অনেক পুরাতন মেম্বার পদত্যাগ করে নতুন টিমের সাথে যোগ দিয়েছেন। আবার অনেকে হ্যাকিং ছেড়ে ব্যাক্তিগত কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে খুব শীঘ্রই এই অবস্থার উন্নতি ঘটবে বলে আশা করা যায়।



হেক্সরোসিস্টঃ অনেকটাই নতুন তৈরি হওয়া এই গ্রুপটি তাদের মেধা এবং আত্মবিশ্বাসের জোরে অনেক উপরে স্থান করে নিয়েছে। তাদের গ্রুপের সূচনা লগ্ন থেকে নিত্য নতুন ওয়েবসাইটএর ত্রুটি বের করা শুরু করে এই গ্রুপটি। বাংলাদেশী হ্যাকার ফোরস এক্স এর হাত ধরে জন্ম লাভ করে এই গ্রুপটি। কম দিনেই গ্রুপের একটিভ ক্রু মেম্বারদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সম্মানজনক অবস্থানে চলে এসেছে এই গ্রুপটি। কিছুদিন আগে ভারতীও টিভি চ্যানেল জি-বাংলায় প্রচারিত কমেডি শো মিরাক্কেলে বাংলাদেশ নিয়ে কটুক্তি করা হয় এবং এর প্রতিবাদস্বরূপ জি নেটওয়ার্কের বেশ কিছু ওয়েবসাইট হ্যাক করে আলোচনায় আসে বাংলাদেশের এই হ্যাকার গ্রুপ।




বাংলাদেশ গ্রে হ্যাট হ্যাকারসঃ বাংলাদেশ গ্রে হ্যাট হ্যাকারস এর নাম আপনারা অনেকেই জানেন। দেশের সাইবার স্পেস রক্ষাকরাই তাদের লক্ষ। দেশের অন্যান্য গ্রুপের মধ্যে ভালো অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ গ্রে হ্যাট হ্যাকারস। ইতিমধ্যে বেশকিছু হ্যাক হওয়া বাংলাদেশী সাইট রিস্টর করে সুনাম কুড়িয়েছে। জানাগেছে বাংলাদেশ পুলিশের সাথেও তাদের কাজের কথা।



সাইবার৭১ : দেশের নতুন আরেকটি হ্যাকার গ্রুপ হল সাইবার৭১। তারা দাবি করে বাংলাদেশের সাইবার স্পেস সুরক্ষা করাই তাদের দায়িত্ব। দেশপ্রেম এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই জন্ম লাভ করে বাংলাদেশের এই গ্রুপটি। গ্রুপটি চালু হবার পর থেকেই গ্রুপের এডমিন এবং ক্রু মেম্বাররা নিত্য নতুন ডিফেসিং কৌশল দেখিয়ে অবাক করে দিচ্ছেন সবাইকে। বাংলাদেশের সাইবার জগতের পরিচিত মুখ সাইবার সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান এলুমিনিয়াম সিকিউরিটির প্রতিষ্ঠাতা আলমাস জামান এই গ্রুপের একজন এডমিন হিসেবে আছেন। দেশের জন্য ভালো কিছু দিবে এমনটাই আশাকরা যায় এই গ্রুপের কাছে।

Abu Rubaiya
Jessore, Khulna, Bangladesh.
STOP SMOKING, WE NEED YOU.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for comments