সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৫

শিশুশ্রম।

সারা বিশ্বের এখন ভয়ংকার পেশার নাম শিশু শ্রম। দিনে দিনে এই শ্রমের শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে, তারা আসহায় হচ্ছে কিন্তু প্রতিকারে কিছুই হচ্ছে না। 

                               বিশ্বের বিভিন্ন এনজিও সংস্থা, সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থা এর বিরুদ্ধে আলাপ, আলোচনা, পরিসংখ্যান তুলে ধরলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রতিদিনই জীবন ধারণ আর দু’বেলা আর দু’মুঠো অন্নের জন্য তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতেই দ্বিধাবোধ করছে না। 

মূলত তাদের নিজেদের খাওয়া আর পরিবারের খাওয়ার জন্য শিশুরা লেখাপড়ার পরিবর্তে পেশার কঠিন আবর্তে জন্মের পরেই চলে যাচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের একটি শ্রেণী তাদের ব্যবহার করে সুবিধা ভোগ করছে। এদের সোনালী ভবিষ্যত অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। 

যে বয়সে তাদের খাতা কলম নিয়ে স্কুলে যাবার কথা ছিলো, ঠিক সেই বয়সে শুধুমাত্র দারিদ্র্যের কারণে আজ ওরা শিশু শ্রমিক। ওদের প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে মোটর ওয়ার্কসপে কাজ করা, ওয়েল্ডিং, গ্যাস কারখানা, বেলুন কারখানা, লেদ মেশিন, রিকশা চালানো, মাদক বাহক, বিড়ি শ্রমিক, বাস-ট্রাকের হেলপার, লেগুনার হেলপার, নির্মাণ শ্রমিক, গৃহ শিশু শ্রমিক, এমব্রয়ডারি, জাহাজ শিল্প, চিংড়ি হ্যাচারি, শুঁটকি তৈরি, লবণ কারখানা, বেডিং স্টোরের শ্রমিক, ইট ভাঙা, ইট ভাটা শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, ট্যানারি এবং রঙ মিস্ত্রিসহ আরো বিভিন্ন ধরনের কাজ। 

শিশু শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে এসমস্ত  প্রতিষ্ঠানের মালিকরা স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক কোন আইনের তোয়াক্কা করছে না কেউ। এমনকি মজুরি কম দিয়ে প্রতিনিয়তই তাদের ঠকাচ্ছে। সংবিধানের ৩৪ অনুচ্ছেদ উপেক্ষা করে শিশুদের দিয়ে জোর করে কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত শিশু শ্রমের দায়ে বাংলাদেশে একজনকে শাস্তি পেতে হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে শিশু শ্রমের অন্যতম বা একমাত্র কারণ হলো দরিদ্র্য। দেশের ৩১ দশমিক ৬ ভাগ মনুষ দরিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। 

এ সব পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু আয় দৈনিক ৮০ টাকারও কম। এদের অনেকের নূন্যতম কোন জমিও নেই। ফলে এসব পরিবারের শিশুরা তাদের পেটের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য শিশু শ্রমে নিপতিত হয়। নিজেদের জন্য, পরিবারের জন্য তারা জীবন বাজি রেখে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতেও দ্বিধা বোধ করে না। 

এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অর্থাৎ শিশু শ্রম নিবরণ করতে হলে প্রয়োজন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগ। পরিবারগুলোর আর্থিক সামর্থ্য বৃদ্ধি ও পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কারণ অধিকাংশ দরিদ্র্য পরিবারের বেশি সন্তান থাকে। 

শিক্ষা ব্যবস্থায় বৃত্তিমূলক শিক্ষা দিতে হবে। প্রয়োজনে এ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক স্তর থেকে কারিগরি স্কুলের ব্যবস্থা করে উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। যাতে তারা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা হতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for comments