মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫

পতিতা এবং আমি।



দরজাটা হালকা শব্দ করে লাগিয়ে মেয়েটির পাশে গিয়ে বসলাম, মেয়ে বলব না যুবতি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না, হতে পারে যুবতি অথবা মহিলা। কথা বলা দরকার, রুম এ আমি আর সে ছাড়া কেউ নেই।  কখনো একটা মেয়ের সামনে একা বসিনি তাই প্রচন্ড নার্ভাস ফিল করছিলাম।  যাই হোক চুপ থাকলাম না, নিজ থেকেই শুরু করলাম। 

★-আপনার নাম কি ?
★-নাম শুনে কাম শুরু করবেন? 
★-হ্যাঁ, কেনো সবাই করে নাকি ?
★-না কিন্তু অনেক লোকেই জিগায়। 
★-ও আচ্ছা, এবার আপনার নাম বলুন? 
★-বন্যা (আমার প্রিয় নাম) 
★-আচ্ছা আপনার বয়স কতো হবে?
★- এই যে ধরেন ১৭, আপনার কি এটা প্রথম ?
★-বেশ ঠান্ডা ভাবেই বললাম হ্যাঁ, আমার প্রথম। 

(বুঝলাম মেয়েটি বয়সে কিশোরী তাই আপনি থেকে তুমিতেই আসলাম।)
  • বন্যা:- তো আপনি শুরু করবেন নাকি আমি করবো?
  • আমি:- সবই করবো কিন্তু আগে আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দাও, তুমি এই বাবসায় কতদিন আছো ?
  • বন্যা:- কেনো হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?
  • আমি:- আমার জানতে ইচ্ছা তাই। 
  • বন্যা:- যাইনা কি করবেন সারা রাইত তো এই শরীরটা নিয়াই থাকবেন, সকাল হইলে তো আর বিয়ে করবেন না। 
  • আমি:- তুমি যা ভাবছো আমি তেমন কিছুই করবো না।
  • বন্যা:- তাহলে কি করতে এসেছেন আপনি?
  • আমি:- তোমার সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।
  • বন্যা:- আগে বলেন আপনার নাম কি?
  • আমি:- সরল ভাবেই বললাম বিপুল। 
  • বন্যা:- কি করেন, পড়াশোনা?
  • আমি:- হ্যাঁ। 
  • বন্যা:- এখানে কে পাঠাইছে?
  • আমি:- কেউ না, তোমার প্রশ্ন শেষ ?
  • বন্যা:- হ্যাঁ।
  • আমি:- আচ্ছা তাহলে এইবার বলো তুমি কতদিন এখানে আছো?
  • বন্যা:- প্রায় ৮ মাস। 
  • আমি:- কিভাবে আসলে এখানে ?
  • বন্যা:- চুপ করে গেলো, অনেক শব্দ করে কেঁদে উঠলো, শুনবেন আমার এখানে আসার
  • কাহিনী ?
  • আমি:- আস্তে করে বললাম, "বলো"।
  • বন্যা:- আমি গ্রামে থাকতাম, 

খুব ভালো অংক করতাম, স্যাররা সবাই আমাকে পছন্দ করতো, কিন্তু আমার পরিবার ভালো ছিলোনা, পরিবার বলতে আমি, আমার মা, বাবা আর আমার ছোটো বোন। বাবা মাঠে কাজ করতেন, একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরেছি, বাসায় দেখলাম এক অচেনা লোক, মা বললেন ইনি তোর মামা, তোকে পড়াতে গ্রামের বাইরে নিয়ে যাবে, আমি কিছুই বললাম না।  
তখন আমি ক্লাস ৯ এ পড়ি, বন্ধুদের থেকে দূরে থাকবো, বাবা মা এমন কি আদরের ছোটো বোনটা কে ও দেখবো না ভেবেই অনেক কান্না পেলো। 
                           তারপর ২ দিন পর বাবা নিজ হাতে ওই লোকটির সাথে আমায় গাড়িতে দিয়ে আসলেন, আমি গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়ি।  হঠাৎ করেই গুম ভাঙ্গে, এখনো ও গাড়িতেই আমি, লোকটা আমাকে একটা জুস দেয় বললো জুসটা খেতে, আমিও খেয়ে নেই। আবার গুম আসে ঘুমিয়ে পড়ি, গুম ভাঙলো চোখে পানির ঝাঁপটা খেয়ে, সামনে দেখি একটা মহিলা আর ঐ লোকটা।

  • -মহিলা হেসে বলে, ফারুক মালটা তো কচি, কই থেইকা পাইছস? 
  • -আফা কইয়েন না, অর আব্বাই অরে বেইচা দিছে। তয় আপনার ভাণ্ডারে এইবার ঝাক্কাস মাল পাইছেন।
  • -খুশি কইরা দিলিরে ফারুক খুশি কইরা দিলি।


তারপর ঐ মহিলা আমার গালে হাত দেয় বলে, আগে করছস ? আমি বোকার মতো বললাম কি ? তারা দুজনেই জোরে হাসি দেয়, শয়তানের হাসি। এতক্ষণ চুপ করে থাকলাম, হয়তো নিজের কান কে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিল তারপর ও করলাম। 

(অনেক প্রশ্ন করার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু শুধু একটা কথাই বললাম) 

★-তারপর? 
মেয়েটির চোখের পানি পড়েই চলছে, থামবার নয়, সে আবার বলা শুরু করলো, প্রথমে বুঝে উঠতে পারিনি কি করবো, হঠাৎ একদিন রুমে বসে আছি, গ্রাম থেকে আনা বই গুলো পড়ছি, দরজা খোলার শব্দ পেলাম, একটা ছেলে আসলো, বয়স ২২ কিংবা ২৩ হবে, এসেই আপনার মতো নাম জানতে চাইল, আমি নাম বললাম। 

-হঠাৎ করেই সে আমার ঘাড়ে হাত রাখলো, তারপর হাতটা চলে গেলো বুকে, আমি অনেক জোরে একটা চড় লাগাই, হয়তো এটাই ছিলো আমার ভুল, সে চলে যায়, একটু পরেই ঐ মহিলা আসে আমায় অনেক মারধোর করে, আমার সব কাপড় খুলে নিয়ে যায়, তারপর ঐ ছেলে আবার আসে, জানি না কতক্ষণ আমার ওপর ঐ অত্যাচার চলে আমি শুধু কাঁদতে থাকি, তারপর আরো ৩ জন আসে। আমি অজ্ঞান হই শেষ পর্যন্ত।

তারপর থেকেই এই নতুন জীবন শুরু, ২ দিন পর পর কতো লোক আসে , কতো রকমের, কেউ এসে ভালো আচরন করে আর কেউ আশে শুধু ক্ষুদা মেটাতে। মেয়েটির চোখ মুখ এইবার শক্ত হয়ে উঠে।

(৫ মিনিট দুজনেই চুপ থাকি) তারপর,
আমি:- বাড়ি যেতে ইচ্ছে হয়? তোমার বাবা মার কাছে যাবে?
বন্যা:- না, আমার কোনও বাড়ি নেই, বাবা মা ও নেই, যারা শুধু টাকাই চিনে তারা কিসের বাবা-মা? শুধু একবার ছোটো বোনটা দেখতে ইচ্ছে হয়।

আসলেই এই প্রশ্নটা আমারই ভুল, ওর তো কোনও পরিবার নেই, থাকলে হয়তো এখন ও বাসায় থাকতো, পড়তো, খেলতো আরো অনেক কিছু করতো।  যারা শুধু অর্থের লোভের মাঝেই থাকে তাদের কোনও অধিকার নেই পিতা মাতা হবার।

মেয়েটি এবার বললো, আপনি কি আমার একটা উপকার করতে পারবেন, আমি বললাম কি ? আপনাকে তো বলেছি আমার একটা ছোটো বোন আছে, কে জানে যদি ওকে ও আমার মতো, বলেই আবার ও কেঁদে উঠে।

আমি কথা দিলাম সাধ্যের বাইরে ও চেষ্টা করবো। তারপর আমার ফোন নাম্বার দিলাম এবং এটা ও বললাম কখন এই যায়গা ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করলে নিচের নাম্বারে যাতে ফোন দেয়, আমি উঠে চলে আসব ঠিক তখনই মেয়েটি উঠে দাঁড়ায়। "ভাইয়া একটু দাঁড়ান, বলেই আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে, কান্না ভরা চোখে একটা ছোট্ট হাসি দেয়"

চলে আসি, ভাবতে থাকি হয়তো আমাদের সমাজ এর কথা। যেখানে আছে, কিছু পশুর বাস। চাহিদা মেটাতে হয়তো নিজের মেয়ে, বোন এর সমান মেয়ের অপর ও ঝাঁপিয়ে পড়তে কোন সংকোচ বোধ করে না। থাক আর ভেবে কাজ নেই, অনেক কাজ বাকি। যেতে হবে অনেক দূরে, মেয়েটির গ্রামে বাঁচাতে হবে ওর ছোটো বোন কে।
লেখাঃ আবু রুবাইয়া।
সাহায্যেঃ অশান্ত ছেলেবেলা।
প্রকাশ্যেঃ ইন্টারনেট।
তথ্যসূত্রঃ অজানা।
জীবনের দামে কেন জীবিকা? 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks for comments